জুন ৪, ২০২০
জমির মালিকদের দখলে পানি সরানোর খাল খলিষখালীর রাঘবকাটীতে জলাবদ্ধতায় আমন চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকেরা
খায়রুল আলম সবুজ, খলিষখালী (পাটকেলঘাটা) প্রতিনিধি : পাটকেলঘাটা খলিষখালীর রাঘবকাটীতে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে আমন চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষকরা। মঙ্গলবার (০২ জুন) বিকালে টানা বৃষ্টির কারণে খলিষখালীর রাঘবকাটি গ্রামের দোয়া বিল সহ ইউনিয়নের অধিকাংশ বিল জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। ফলে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঘবকাটীর দোয়া বিল, দুধলাই বিল, চোমরখালী বিল সহ ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলে প্রায় হাঁটু পানি জমে গেছে। কৃষকরা জানান, ‘আষাঢ় মাস থেকে আমন রোপণের মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এখন জ্যৈষ্ঠ্য মাসেই যদি বিলে পানি জমে আমন রোপণের অনুপযোগী থাকে তাহলে বর্ষার সময় কি হবে। দ্রæত যদি পানি না কমে সময়মতো আমন রোপণ করা সম্ভব হবে না’। স্থানীয় কৃষকরা জানায়, ‘পানি সরবরাহের খালে অবৈধ দখল করে মাছ চাষের জন্য ভেড়ী বাধ দিয়ে রেখেছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। রাঘবকাটীর দোয়া বিলে সরকারি খালে মাছ চাষের জন্য ভেড়ী বাধ দেয়ায় পানি সরবরাহের কোন পথ খোলা নেই। এছাড়া দোয়া বিলের সরকারি খালটি ঠিক মত খনন না করার কারণে ভরাট হয়ে জমির সমতুল্য হয়ে গেছে। খালের পাশের জমির মালিকরা খালটি ভোগদখল করে ধান চাষাবাদ করে। ফলে আমন চাষের জন্য বীজ বপনও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে’। একদিকে করোনা ভাইরাসের জন্য দিশেহারা কৃষক অন্যদিকে বোরো ধানও বৃষ্টির কারণে ঠিকঠাক ঘরে তুলতে পারেনি রাঘবকাটী সহ ইউনিয়নের কৃষকরা। আবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তো সব শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে আমন চাষ করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে বলে কৃষকরা আশায় বুক বেধে ছিল। কিন্তু সে আশাটাও যেন কৃষকদের নিরাশা হয়ে উঠছে সরকারি খাল অবৈধ দখল ও ঘেরের অবৈধ ভেড়ী বাধের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য। কৃষকদের দাবি মাছ চাষ নয় আমরা ধান চাষ করতে চাই। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে খাল দখল করে বাঁধ ও ঘেরের ভেড়ি বাধ করায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে পানি কমে গেলে চলতি মাসে বীজ বপন করবে বলে জানায় কৃষকরা। ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের সুজায়েত আলী সানা বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তারই জন্য ইউনিয়নবাসীর সম্মতিতে গত ১৯ ফেব্রæয়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের বরাবর খলিষখালী ইউনিয়নের সরকারি খাল বন্দবস্ত বাতিল করণের জন্য একটি আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তার কোন ব্যবস্থা এখনও হয়নি। এ ইউনিয়নে অধিকাংশ খালগুলো প্রভাবশালীরা নেট, পাটা ও ভেড়ী বাধ দিয়ে দখল করে মাছ চাষ করছে। এজন্য একটু বৃষ্টি হলেই বিলে পানি জমে যাচ্ছে। সুতরাং প্রশাসন যদি দ্রæত সরকারি খালগুলোর নেট, পাটা ও অবৈধ ভেড়ী বাধ অপসারণ না করে কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে চলতি বছর আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে’। খলিষখালী উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে খালের ভেড়ী বাধের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে’। খলিষখালী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা অরুণ কুমার পাল জানান, ‘ইতিপূর্বেও আমি ব্যবস্থা নিতে সরেজমিনে গিয়েছিলাম এবং কৃষকরা আমার সাথে থেকে খালগুলোর অবৈধ ভেড়ী বাধ ও নেট পাটা অপসারণে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বস্ত করেছিল কিন্তু সেখানে কেউ ছিল না। মনে হয় প্রভাবশীলদের ভয়ে কেউ যায়নি। এখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুনরায় নির্দেশ প্রদান করলে আমি পদক্ষেপ গ্রহণ করব’। এমতাবস্থায় রাঘবকাটী কৃষকদের একটাই প্রাণের দাবি দোয়া বিলের মাঝ দিয়ে যে সরকারি খাল গেছে এ খাল খনন করে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এজন্য কৃষকরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। 8,575,011 total views, 2,781 views today |
|
|
|